-
কাজী নজরুল ইসলামকে জন্মদিনে প্রণাম
Please Visit & Subscribe my Youtube Channel : Keleedas Kobita (to view & listen the Video)
Audio File:
আজ কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন।
তাঁর কবিতা বিদ্রোহীর শুরুতে তিনি বলেছেন-
বল বীর-
বল উন্নত মম শির
শির নেহারি আমারি নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির।
বল বীর-
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি
ভূলোক দ্যুলোক গোলোক ভেদিয়া
খোদার আসন আরস ছেদিয়া
উটিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর।
মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটিকা দীপ্ত জয়শ্রীর।
আবার আরেক জায়গায় তিনি বলেছেন,
মহা-বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।
বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম ও বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর দুজনেই আমাদের প্রিয়। তাঁদের দুজনের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সাক্ষাৎকার নিয়ে দু-চারটে কখা বলি।
“বিদ্রোহী কবি” নজরুল, রবীন্দ্রনাথের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন, তাঁকে একজন পরামর্শদাতা এবং অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে দেখেছিলেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্মানে প্রশংসাপত্র এবং কবিতাও লিখেছিলেন। তাঁর কবিতার বই সঞ্চিতা উৎসর্গ করেছিলেন – বিশ্বকবিসম্রাট শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রীশ্রীচরনারবিন্দেষু লিখে।
নজরুল যখন “বিদ্রোহী” কবিতার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে নতুন ঝড় তুলেছেন, তখনই রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রতিভার স্বীকৃতি দেন। রবীন্দ্রনাথ নজরুলের প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে চিঠি লিখে প্রশংসা জানান। এই চিঠি নজরুলের জীবনে এক বিশাল প্রেরণার উৎস হয়েছিল।
১৯২২ সালে শান্তিনিকেতনে নজরুল ও রবীন্দ্রনাথের প্রথম ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ হয় । এই সময় নজরুল “আনন্দময়ীর আগমনে” ও অন্যান্য বিদ্রোহাত্মক কবিতা লিখে বিপুল আলোচনায়। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে সস্নেহে গ্রহণ করেন।
রবীন্দ্রমাথ ঠাকুর নজরুলকে আর্শীবাদ করে বলেন—‘তোমার কলম যেন কখনও মরে না।’ সেই আশীর্বাদ নজরুল সারা জীবনের পাথেয় হিসেবে ভেবেছেন।
আরও কয়েকবার নজরুল শান্তিনিকেতনে যান, যেখানে কবিগুরু তাঁকে সাদরে আপ্যায়ন করেন। তাঁদের সাহিত্যচর্চা, সংগীত এবং রাজনৈতিক চিন্তার বিষয়েও আলোচনা হয়। রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে শান্তিনিকেতনে স্থায়ীভাবে থাকার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন, যদিও নজরুল তা গ্রহণ করেননি।
নজরুল ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ভক্ত, আবার রবীন্দ্রনাথও নজরুলের প্রতিভা স্বীকার করেছিলেন। নজরুল যখন সংগীতচর্চা শুরু করেন, তখন রবীন্দ্রনাথ বলেন, “নজরুলের গানের মধ্যে নতুন সুরের হাওয়া আছে।”
১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুতে নজরুল ছিলেন গভীরভাবে মর্মাহত হন। তিনি একটি হৃদয়বিদারক কবিতা লেখেন—“রবিহারা”।
নজরুলের প্রতিভা এবং অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাঁর “বসন্ত” বইটি নজরুলকে উৎসর্গ করেছিলেন।
নজরুলের জীবন শুরু হয় এক সাধারণ পরিবেশে। স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। মুসলিম পরিবারের সন্তান এবং শৈশবে ইসলামী শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েও তিনি বড় হয়েছিলেন একটি ধর্মনিরপেক্ষ সত্তা নিয়ে।
একই সঙ্গে তার মধ্যে বিকশিত হয়েছিল একটি বিদ্রোহী সত্তা। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার তাকে রাজদ্রোহিতার অপরাধে কারাবন্দী করেছিল। তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন অবিভক্ত ভারতের বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন।
নজরুল তাঁর সুগঠিত দেহ, অপরিমেয় স্বাস্থ্য ও প্রাণখোলা হাসির জন্য বিখ্যাত ছিলেন। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারাত্মকভাবে স্নায়বিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে পড়লে আকস্মিকভাবে তার সকল সক্রিয়তার অবসান হয়। ফলে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যু অবধি সুদীর্ঘ ৩৪ বছর তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়।
বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রনে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে তাকে সপরিবারে কলকাতা থেকে ঢাকা স্থানান্তর করা হয়। ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালে তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয এই বছরেই তিনি বাংলাদেশে মৃত্যুবরণ করেন।
কবির একটি গান দিয়ে কবিকে গ্রণাম জানিয়ে শেষ করছি।