• মা দূর্গার সন্ধীপূজো
    Poetry

    মা দূর্গার সন্ধীপূজো

    Audio File:

    Please Visit & Subscribe my Youtube Channel : Keleedas Kobita

    মা দূর্গার ‘সন্ধীপুজো’ কথাটি

       অসুরের সঙ্গে সন্ধী করার সম্পর্কিত নয়।

    মা অসুরের সঙ্গে ন’দিন যুদ্ধ করে

         তাকে পরাস্ত করেই যুদ্ধ শেষ হয়।

    আসলে এ নামটি এসেছে

           দুটি তিথির সংযোগ সময়ে।

    মহাষ্টমীর শেষ চব্বিশ মিনিট

        আর মহানবমীর প্রথম চব্বিশ মিনিট নিয়ে।

    এই আটচল্লিশ মিনিট

               মায়ের সন্ধীপুজোর ক্ষণ।

    বিশেষ  এই সময়ে

               মায়ের হাতে অসুর বধ হন।

    এই সল্প সময়ে পুরোহিত মশাইকে

            ষোড়শোপচারে পুজো করতে হয়।

    এছাড়া মায়ের  বলিদান ও

            একশো আটটি দীপমালায় আরতি হয়।

    এই ষোড়শ উপাচারে পুজোতে

           মাকে প্রথমে আহ্বান করা হয়।

    পা ধোয়ার জল,

        হাত মুখ ধোওয়ার জল দেওয়া হয়।

    ঘরেতে আসন দেওয়া হয়

              মাকে বসতে।

    মায়ের স্নানের পরে

        বসন ও আভরণ দেওয়া হয় মাকে।

    এই প্রচারে মধু, সুগন্ধি

         ধূপ, দীপ ও চন্দন লাগে।

    এছাড়া বিভিন্ন নৈবেদ্য

           উৎসর্গ করা হয় মাকে।

    সন্ধীপুজোতে চামুন্ডা রূপে

             আহ্বান করা হয় মাকে।

    মায়ের এই নামটি এসেছে

        মায়ের চন্ড ও মুন্ডকে বধ করা থেকে।

    দেবী দূর্গা তাঁর তৃতীয় নয়ন থেকে

           মা কালী ব চন্ডিকাকে সৃষ্টি করেন।

    সেই মা চন্ডিকাই

           অসুরকে দলন করেন।

    মা প্রথম বধ করে ছিলেন

              চন্ড ও মুন্ডকে।

    তারপরে মা বধ করেন

           শুম্ভ ও নিশুম্ভকে।

    পুরানের অন্য মতে, দেবী

           বধ করেন মহিশাষুরকে।

    অকাল বোধনে দেবীর কৃপায়

         রামচন্দ্র বধ করেন রাবণকে।

    ষোড়শ পূজার শেষে

          মায়ের বলিদান হয়।

    বলিদানে নিজের সম্পদ বা পোষ্যকে

           মাকে অর্পণ করা হয়।

    এরপর মায়ের আরতি হয়

        একশো আটটি দীপে ও কর্পুর দীপে।

    জলশঙ্খ, পদ্মফুল, কাপড়

        ও চামড় লাগে আরতিতে।

    পূজা শেষে ভক্তরা

           মাকে পুস্পা্জলী দেয়।

    প্রর্থনা করে, শক্তি, শান্তি

       দীর্ঘায়ু ও দেহের আরোগ্য কামনায়।

  • মা সরস্বতীর কথা ও সরস্বতী পুজো
    Miscellaneous

    মা সরস্বতীর কথা ও সরস্বতী পুজো

    Audio:

    Please Visit & Subscribe my Youtube Channel : Keleedas Kobita

     মা সরস্বতী হলেন হিন্দুধর্মে জ্ঞান, সঙ্গীত, শিল্পকলা, বাক্য, প্রজ্ঞা ও বিদ্যার্জনের দেবী।মা সরস্বতী, লক্ষ্মী ও পার্বতী হিন্দুধর্মে “ত্রিদেবী” নামে পরিচিত। দেবী রূপে  মা সরস্বতীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদে। বৈদিক যুগ থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত হিন্দুধর্মে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবীর স্থান অধিকার করে রয়েছেন।  মা সরস্বতী সাধারণত দ্বিভুজা বা চতুর্ভুজা মূর্তিতে পূজিতা হন। দ্বিভুজা মূর্তিতে তাঁর হাতে থাকে বীণা ও পুস্তক অথবা কলম ও পুস্তক; চতুর্ভুজা মূর্তিতে থাকে পুস্তক, অক্ষমালা, সুধাকলস ও বীণা।

    হিন্দুদের একাংশ  মা সরস্বতীর পূজা করেন শ্রীপঞ্চমী বা বসন্তপঞ্চমীর (মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথি, এই দিনটি ভারতের বিভিন্ন অংশে  মা সরস্বতী পূজা বা  মা সরস্বতী জয়ন্তী নামেও পরিচিত) দিন। এই দিনটিতে শিশুদের হাতেখড়ি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। পশ্চিম ও মধ্য ভারতে জৈন ধর্মাবলম্বীরাও  মা সরস্বতীর পূজা করেন। এছাড়া বৌদ্ধদের কোনও কোনও সম্প্রদায়েও  মা সরস্বতী পূজা প্রচলিত।

    নামের-ব্যুৎপত্তি

    সরস্ ও ৱতী – এই দুই সংস্কৃত শব্দের সন্ধির মাধ্যমে  মা সরস্বতী নামটির উৎপত্তি। সরস্ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হ্রদ বা সরোবর হলেও এটির অপর অর্থ “বাক্য”; ৱতী শব্দের অর্থ “যিনি অধিষ্ঠাত্রী”। নামটি আদিতে ” মা সরস্বতী” নামে পরিচিত এক বা একাধিক নদীর সঙ্গে যুক্ত হলেও এই নামটির আক্ষরিক অর্থ তাই হয় “যে দেবী পুষ্করিণী, হ্রদ ও সরোবরের অধিকারিণী” বা ক্ষেত্রবিশেষে “যে দেবী বাক্যের অধিকারিণী”। সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুযায়ী ” মা সরস্বতী” শব্দটির সন্ধিবিচ্ছেদ এভাবেও হতে পারে – সরসু+অতি; সেক্ষেত্রে শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় “যা প্রচুর জল ধারণ করে”।

    ঋগ্বেদে নদী ও গুরুত্বপূর্ণ এক দেবী উভয় অর্থেই ” মা সরস্বতী” নামটি পাওয়া যায়। মা সরস্বতী নদী অর্থে বিভিন্ন উত্তরপশ্চিম ভারতীয় নদীর নামের সঙ্গে একই সারিতে। তারপর  মা সরস্বতীকে এক নদী দেবতা হিসেবে উপস্থাপনা করা হয়েছে। ঋগ্বেদের দ্বিতীয় মণ্ডলে  মা সরস্বতীকে শ্রেষ্ঠ মাতা, শ্রেষ্ঠ নদী ও শ্রেষ্ঠ দেবী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

     মা সরস্বতী হলেন মাতৃকাগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, নদীগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং দেবীগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।

    প্রাচীন হিন্দু সাহিত্যে  মা সরস্বতী নানা নামে পরিচিত। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় ব্রহ্মাণী (ব্রহ্মার শক্তি), ব্রাহ্মী (বিজ্ঞানের দেবী), ভারতী (ইতিহাসের দেবী), বর্ণেশ্বরী (অক্ষরের দেবী), কবিজিহ্বাগ্রবাসিনী (যিনি কবিগণের জিহ্বাগ্রে বাস করেন) ইত্যাদি নাম। আবার  মা সরস্বতী বিদ্যাদাত্রী (যিনি বিদ্যা দান করেন), বীণাবাদিনী (যিনি বীণা বাজান), পুস্তকধারিণী (যিনি হস্তে পুস্তক ধারণ করেন), বীণাপাণি (যাঁর হাতে বীণা শোভা পায়), হংসবাহিনী (যে দেবীর বাহন রাজহংস) ও বাগ্দেবী (বাক্যের দেবী) নামেও পরিচিত।

    মা সরস্বতী পুষ্পাঞ্জলি-মন্ত্র —

    ওঁ ভদ্রকাল্যৈ নমো নিত্যং সরস্বত্যৈ নমো নমঃ।

    বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা-স্থানেভ্য এব চ॥

    এষ সচন্দনপুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ ঐং সরস্বত্যৈ নমঃ॥

    প্রণাম-মন্ত্র:

    সরস্বতি মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।

    বিশ্বরূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমোঽস্তু তে॥

    জয় জয় দেবি চরাচরসারে, কুচযুগশোভিতমুক্তাহারে।

    বীণাপুস্তকরঞ্জিতহস্তে, ভগবতি ভারতি দেবি নমস্তে॥

    জয় মা সরস্বতী