
মহানায়কের শেষ দৃশ্য
Please Visit & Subscribe my Youtube Channel : Keleedas Kobita (to view & listen the Video)
Audio File:
এ দৃশ্য কোনও নাটকের নয়
নয় কোনও সাধারণ মানুষেরও।
এ যে সত্যি ঘটনা
বাংলার মহানায়কের।
মহানায়ককে টালিগন্জের এক
স্টুডিও থেকে আনা হয়েছে।
তাঁর বুকে ব্যথার জন্য
নাসিং হোমে পরীক্ষা নিরিক্ষা চলছে।
মহানায়ক একদিন বল্লেন,
বশির আহমেদকে, তাঁর মেকআপ ম্যান।
বশির, আমাকে মানুষেরা
সবাই ভুলে যাবে একদিন।
সেই মানুষটিই একটি সিনেমার
সংলাপে বলেছিলেন,
তোমরা আমাকে রাজা সাজতে বলছো,
আমি কিন্তু রাজা সাজতে আসিনি।
বন্ধুরা এতক্ষণে বুঝে গেছেন,
তিনি আজও রাজা আপামর বাঙালীর।
তিনি সত্যজিৎ রায়ের নায়ক, সবার প্রিয়
আমাদের নয়নের মণি উত্তমকুমার।
ওগো বঁধু সুন্দরীর সেট থেকে
তাঁকে বেলভিউতে আনা হয়েছে।
সেটে মুখে সাবানের ফেনা নিয়ে
সিঁড়ি দিয়ে কয়েকবার ওঠানামা করতে হয়েছে।
সেদিন লাইট, ক্যামেরা, সাউন্ড
সবই প্রস্তুত রয়েছে।
কিন্তু সুটিং সেদিনের মতো বন্ধ হলো
কারম মহানায়কের বুকে ব্যথা হচ্ছে।
বাইরে তখন বৃষ্টি হচ্ছে
অঝোর ধারায়।
মহানায়কের কষ্টে, প্রকৃতিও
যেন ভেঙে পরেছে কান্নায়।
জীবনের শেষ অঙ্কে কয়েকটি বছর
উত্তমকুনার ছিলেন অনেকটা চুপচাপ।
নিঃশব্দে জানলার পাশে রসে থাকতেন
হাতে একটি সিগারেট ও চা এক কাপ।
নারসিং হোমে ডাক্তাররা
নানান ওষুধ দিয়ে চলেছেন।
উত্তমকুমার সবাইকে অবাক করে
একটি সিগারেট চাইলেন।
নায়ক তখনও নায়কোচিত
মুখটি করে শুয়ে আছেন।
সিগারেটের ধোঁয়ায়
তিনি রিং বানাতে লাগলেন।
ক্যামেরা ছাড়াই যেন
নায়ক একটি শট দিচ্ছেন।
উপস্থিত সবাই সে দৃশ্যটি
উপভোগ করতে লাগলেন।
তারও কিছুদিন আগে একটিবার
সুচিত্রা সেনকে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
কিন্তু মহানায়িকা ভেঙে পরার ভয়েই
হয়তবা আসতে অপারোগ হয়েছিলেন।
বেলভিউতে শুয়ে একটি রাত
তিনি কাটিয়ে ছিলেন।
শেষ রাতে তিনি রবিঠাকুরের
শেষের কবিতা পাঠ করেছিলেন।
তিনি গেয়ছিলেন, এই পথ যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হতো, তুমি বলোতো।
আবার অন্য ছবিতে গেয়েছেন, সূর্য্য ডোবার পালা
আসে যদি আসুক বেশতো।
কিন্তু জীবনের পথ যে
শেষ হয় এক জায়গায়।
তেমনি নিয়মমতো সূর্য্যদেবও
নির্দিষ্ট উদয় ও অস্ত যায়।
চব্বিশে জুলাই উত্তমকুমার শেষ নিঃশ্বাষ ত্যাগ করলেও
বেঁচে আছেন তিনি মানুষের ভালবাসায়।
তাই তাঁর শেষ যাত্রায় কোলকাতার রাস্তা
মানুষের ভীরে জনসমুদ্রে পরিনত হয়।

